কালিজিরা কালো হীরা নামেও পরিচিত
কালিজিরা অতি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একটি ফসলের নাম। কালিজিরার বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa L, Ranunculaceae পরিবারভূক্ত বর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় একটি উদ্ভিদ।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর থেকে কালিজিরা মসলা ও ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি নাম। এ ফসলটির উৎপত্তি মূলত পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্য প্রাচ্য থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত। কালিজিরা বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান,শ্রীলংকা,নেপাল,ইরাক,মিশর প্রভৃতি দেশে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
কালিজিরার গুনাগুন ও ব্যবহারঃ
শরীরের ভিবিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য কালিজিরার মতো এত কার্যকর অন্য কোন প্রাকৃতিক কোন ঔষধ নেই। ছন্দকার রা বলে '' ঔষধি গুনে অনন্য, কালিজিরা খেয়ে হও ধন্য ''। কালিজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের পীড়া। কালিজিরার বীজে রয়েছে শর্করা,আমিষ,ফ্যাটি এসিড,অ্যামাইনো এসিড,সিস্টিন,মিথিওনিন,ভিটামিন-এ,ভিটামিন-বি, নিয়াসিন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান। এছাড়াও কালিজিরার বীজে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,আয়রন,
সোডিয়াম,পটাশিয়াম,দস্তা,ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যঙ্গানিজের মতো মৌল উপাদান রয়েছে।
কালিজিরার বীজ উদ্দীপক,স্মৃতিবর্ধক,বায়ুনাশক,হজম বৃদ্ধিকারক,জীবানুনাশক,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও কালিজিরা বহুবিধ রোগ বিশেষ করে মাথাব্যাথা, ফোড়া সারাতে, চুল পড়া রোধে, হাপানি ও চর্মরোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। তাছাড়া অনিদ্রা, মুখশ্রী, সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা, দূর্বলতা এবং প্রসূতি মহিলাদের দুধের প্রবাহ ও পরিমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কালোজিরার ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অপ্রধান মসলা ফসল ফসল হিসেবে পরিচিত। ব্যবহার ও উৎপাদনের দিক থেকে গৌণ হলেও এদেশের রসনাবিদদের কাছে এটি একটি প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ন মসলা। পাচফোড়নের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলা হচ্ছে এই কালোজিরা। ভিবিন্ন আয়ুর্বেদিক, হারবাল, ইউনানি কোম্পানিগুলোর ঔষধ তৈরির কাচামাল হিসেবে কালিজিরা ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (আলফা টোকোফেরল), অ্যাস্টিটিউমার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন রয়েছে।
এমনকি কালিজিরা ফুলের মধুও অত্যন্ত উপকারী। একমাত্র মৌমাছিই কালিজিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটায়।
বাংলাদেশে কালিজিরাঃ
বাংলাদেশে ১৪,৭৪২ হেক্টর জমিতে ১৬,৫২৬ মেট্রিক টন কালিজিরা উৎপন্ন হয় (সুত্রঃ ডি এ ই- ২০১৭ )। ফরিদপুর, মাগুড়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার উচু ও মাঝারী উচু এবং দো-আশ থেকে বেলে দো-আশ মাটিতে চাষাবাদ বেশি হয়। মাটির পি এইচ ৭.০-৭.৫ এবং উচ্চমাত্রায় অনুজীবের কার্যক্রমসম্পন্ন বেলে দো-আশ মাটি কালিজিরা চাষের জন্য উত্তম। মে ২০১৭ প্রকাশিত বি বি এসের তথ্য মতে ২০১৫-১৬ সালে ৫২০ মেট্রিক টন কালিজিরা (HS Code 0909-Black Cumin Seed) ৫ কোটি ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশের কৃষক পর্যায়ে ফসলটির গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৬০০-৭০০ কেজি।
কালিজিরা গবেষণা, অর্জন এবং সম্প্রসারণঃ
২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক 'বারি কালিজিরা-১' নামে কালিজিরা কালিজিরার একটি উচ্চফলনশীল জাত চাষবাদের জন্য উদ্ভাবন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সার,সেচ ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য উপাদান প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই