ভেষজ উদ্ভিদের পরিচিতি ও গুনাগুন
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ একটি দেশ। সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন উপকারী গাছ-গাছড়া। বহুপ্রাচীনকাল থেকেই এসব গাছ লতাপাতা মানুষের বিভিন্ন রোগ ব্যধিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেসব গাছ-গাছড়াকে আমারা অনেকেই জানি না, চিনি না, কি তার গুন- এসব বিষয় সম্পর্কে আমরা মোটেও পরিচিত নই। এখানে যেসব গাছ গাছড়া নিয়ে আলোচনা করা হল তা এদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। যে কোন রোগে এসব গাছান্ত ঔষধ প্রয়োগ করলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
বাসক
বাংলা নাম- বাসক, বাসকপাতা।
ইংরেজী নাম- Malabar Nut,
বৈজ্ঞানিক নাম- Adhatoda zeylanica nees
পরিবার- Acanthaceae
সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
বাসক একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। শ্বেত ও তাম্র দু'শ্রেণীর বাসক দেখতে পাওয়া যায়। সাদা বাসক গাছ লম্বায় খুব একটা বড় হয় না। এর কান্ড সরল, শাখা গোলাকার, পাতা লম্বা, ফুলের আগার দিকে বেগুনি রঙের চিহ্ন রয়েছে। তাম্রবর্ণের পুষ্প যে বাসক গাছে হয় সেই বাসক গাছের ডাল কিছুটা মোটা, গাঁটের রঙ লাল। এর পাতা, ডাল ও ছালে তিতার ভাগটা কম। গরমকালে গাছে ফুল ফোটে। বর্ষার প্রথমে ফল ধরতে শুরু করে।
রাসায়নিক উপাদানঃ
বাসক গাছের পাতায় যেসব রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান তার মধ্যে কাইনাজোলিন, আ্যালকালয়েড, ভেসিকোলিনিন, ভেসিকোলিন, ভেসিসিনোল, এনিসোটিন এবং হাইড্রো , অত্যাবশ্যকীয় তৈল, চর্বি, রেজিন বিটা-সিটোস্টরল এবং ভিটামিব সি মূলে আছে ভেসিসিন, ভেসিসিনোল এবং অত্যাবশ্যকীয় তৈল।
ব্যবহারঃ
বাসক পাতা খোস-পাচরায়, রক্তপিন্ড, সর্দি-কাশিতে, ক্ষয়রোগে, হাপানিতে, চামড়ার রঙ উজ্জ্বল করতে, অম্লপিত্তে, পানি জীবানু মুক্ত করতে, হাত পা ফুলে গেলে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নিম
বাংলা নামঃ নিমগাছ
ইংরেজী নামঃ Indian Lilac
বৈজ্ঞানিক নামঃ Melia Azadirchta Linn
পরিবারঃ Meliaceae
সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
চার ধরনের নিম গাছ বাংলাদেশে দেখা যায়_
১। সাধারণ নিম গাছঃ এ শ্রেণীর নিম গাছ ছোট আকৃতির হয়। উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ ফুটের মধ্যে থাকে। পাতার আকৃতি একটু বেঁটে ধরনের এবং পাতার রসে তিতার ভাগটা কম।
২। মহা অথবা ঘোড়া নিমঃ এ শ্রেণীর নিম গাছ লম্বায় যথেষ্ঠ বড় হয়। এর পাতা দেড় থেকে প্রায় ২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। তবে অন্য নিমের মতো পাতা বাকানো থাকে না। পাতার রসে তিতার ভাগটা খুবই বেশি।
৩। কার্পস্ক নিমঃ এ শ্রেণীর নিম গাছ মাঝারি ধরণের হয়। এর পাতার সোজা দিকটা গাঢ় সবুজ এবং বিপরীত দিকের রঙ হালকা সবুজ ঘোড়া নিমের তুলনায় পাতার রসে তিতার ভাগটা কম।
৪। ভুঁই নিমঃ এ শ্রেণীর নিম গাছ লম্বায় খুব বেশি বড় হয় না। পাতার আকারও বেশ ছোট। পাতার তিতার ভাগ সাধারণ নিমের মতো। আমাদের দেশে এ নিম গাছ আপনা আপনি জন্মায়। নিমে পিংকিস সাদা ধরনের ছোট ছোট ফুল হয় যা এক্সিলারি পেনিকেলে সজ্জিত থাকে। বীজ ঝড়ে পড়া ধরনের ফল হয়।
ব্যবহারঃ
খোসপাঁচড়ায় নিমের পাতা খবই উপকারী।
আকন্দ
বাংলা নামঃ বড় আকন্দ
ইংরেজী নামঃ Gigantic Swallow-Muclar
বৈজ্ঞানিক নামঃ Calotropis gigantea (linn)
পরিবারঃ Asclepiadaceae
সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
এটি মাঝারি আকৃতির বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় গাছ। এর কান্ড কিছুটা শক্ত, কচি ডাল পশমময়। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। চওড়া ১-৩ ইঞ্চির মত লম্বাকৃতি। দেখতে অনেকতা কাঠাল পাতার মতো। পাতার আকারের তুলনায় বোঁটা খুবই ছোট। ফুলের রঙটা ফিকে বেগুনি।
রাসায়নিক উপাদানঃ
পাতা ও কান্ডে মিল্ক লেটেক্স বের হয় যা প্রোটিয়েজ এনজাইম সমৃদ্ধ। ক্যালোট্রফিন F1, F2,D1,D2, গ্লুটাথিয়ন, অ্যাসকরিক এসিড ইত্যাদি বিদ্যমান।
ব্যবহারঃ
আকন্দ পাতা কানের ব্যথা বেদনায়, গেটে বাত হলে, চর্মরোগে, রক্ত আমশয়, ফোলায়, ঠান্ডা-কাশি ও অজীর্ণে আকন্দের ফুল ব্যবহৃত হয়। মশা ও ইদুরের উৎপাত হলে এর পাতা পুরিয়ে ধোয়া দিলে মশা ও ইঁদুরের উপদ্রব দূর হয়।
তুলসী
বাংলা নামঃ গ্রাম্য তুলসী, বাবুই তুলসী, দুলাল তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী ও রামতুলসী।
ইংরেজী নামঃ Wild basil, Common Basil, Sweet basil
বৈজ্ঞানিক নামঃ Ocimum americamum linn
পরিবারঃ Labiatae
সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
বর্ষজীবী ছোট সার্ব জাতীয় খাড়া উদ্ভিদ এবং শক্তিশালী সুগন্ধযুক্ত ও ভেট পাতা, স্কোয়ার কান্ড, সাদা গোলাপী অথবা বেগুনী ফুল উৎপাদন করে। মূলত পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে এর আদিজাত জন্মে থাকে, লম্বায় ১-২ ফুট হয়। কান্ড নরম লোমযুক্ত এর শাখাগুলো ছড়ানো থাকে ও পাতা লোমযুক্ত।
রাসায়নিক উপাদানঃ
সাধারণত পাতায় ১% অত্যাবশ্যকীয় তৈল লিনালোল, বর্ণিওল, ইউজিনোল, থাইমল মিথাইল সিনামেট, মিথাইল চাভিকোল এবঙ্গমিসেন এছাড়াও সেসকুইটারপেন হাইড্রোকারবোন, বাইসাইক্লোসেস ইত্যাদি বিদ্যমান।
ব্যবহারঃ
গ্রাম্য তুলসীর রস কাশ ভালো করে। জ্বর উপশম করে, ম্যালেরিয়া জ্বরে উপকারী। বাবুই তুলসী ঘর্মকারক, আমাতিসার, গনোরিয়া, কফরোগ, প্রসূতিদের পরবর্তীতে বেদনা, জীর্ণ জ্বরের পীতাবস্থায় ও বমি নিবারণ করে, কর্ণ বেদনায় এর রস কানে দিলে উপকার হয়। বুকের ব্যথায়, আম বা রক্তাতিসারে, রক্তমূত্রে ও কাশি রোগে এ তুলসীর রসে উপকার হয়।
কোন মন্তব্য নেই