Header Ads

Header ADS

কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ

প্রক্রিয়াজাতকরণ হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান, যার মাধ্যমে পুষ্টি ও অন্যান্য গুণগতমান অক্ষুণ্ন রেখে খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত (fit condition) পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। প্রক্রিয়াজাত পণ্যের গুণগতমান নির্ভর করে মূলত প্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়া শুরু করার সময় তাদের গুণগতমান কেমন ছিল তার উপর (Kader and Barret 2005)পুষ্টিমান হলো একটি ফলে কি পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আঁশ, শর্করা, প্রোটিন এবং এন্টি অক্সিডেন্ট ফাইটোক্যামিক্যালস (ক্যারটিনয়েড, ফ্ল্যাভানয়েড এবং অন্যান্য ফিনোলিক দ্রব্য) আছে তার উপর নির্ভর করে। প্রক্রিয়াজাত পণ্য তথা ফলে ফাইটোক্যামিক্যাল এর পরিমাণ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ফাইটোক্যামিক্যাল এর স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে, যা মূলত পণ্যের জারণ (oxidation) ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সংবেদনশীলতার সাথে সম্পর্কযুক্ত (Leong and Oey 2012) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন- ভিটামিন-সি, বি১, বি২, বি৬ এবং ফলিক এসিড তাপ সংবেদনশীল কিন্তু চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনসমূহ তুলনামূলকভাবে তাপসহনশীল। ফলে উপস্থিত খনিজ পদার্থসমূহ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ততটা প্রভাবিত হয় না।


প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন প্রয়োজন?

অধিকাংশ ভোক্তাই সবচেয়ে তাজা ফল এবং সবজি পেতে ও খেতে চায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সকল বিচিত্র রকমের ফল ও সবজি বছরব্যাপী উৎপাদন করা যায় না। কিছু ফল আছে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জন্মায়, আবার অনেক সুস্বাদু ফল স্বল্প সময়ের জন্য জন্মায় এবং সে সময়টি পার হওয়ার পর আর সে ফলগুলো পাওয়া যায় না। এ সমস্ত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পর তাজা  ফলের স্বাদ গ্রহণের জন্য ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি আদর্শ বিকল্প (alternative) প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ফলের ক) প্রাপ্যতা সময় বৃদ্ধি পায়, খ) ফল সংরক্ষণের সময় কম নষ্ট হয় এবং সংরক্ষণ সময় বৃদ্ধি পায়, গ) খাদ্যের অনুজৈবিক এবং রাসায়নিক নিরাপত্তা বাড়ে এবং ঘ) খাদ্যেও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়। ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে জাত নির্বাচন এবং ফলের পরিপক্বতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণ করা যায়। গবেষণায় দেখা যায় যে, ফল তাজা, ফ্রোজেন এবং প্রক্রিয়াজাত (canned) যে অবস্থায়ই খাওয়া  হোক না কেনো, তা বর্ণ, গন্ধ, গ্রহণযোগ্যতা এবং পুষ্টিমানের দিক দিয়ে একই রকম, যদিও তা শস্য সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়ার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল

শুষ্ককরণ(Drying)
খাদ্যদ্রব্যের পচন রোধের জন্য যেসকল পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তার মধ্যে শুষ্ককরণ অন্যতম। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১২, ০০০ সালে মধ্য-পূর্ব এবং প্রাচ্যে সূর্যালোকের সাহায্যে খাদ্যদ্রব্যকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হত। সবজি এবং ফলমূল স্বাভাবিকভাবেই সূর্যালোকের মাধ্যমে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়

শীতলীকরণ(Cooling)
শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্যের পচনকারী এনজাইমের ক্ষতিকার প্রভাব এবং অনূজীবের বংশবিস্তার রোধ করার জন্য খাদ্যকে নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হ
গরম কিংবা প্রতিকূল আবহাওয়া এই প্দ্ধতিতে দীর্ঘদিন খাদ্যের গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রেখে সংরক্ষন করা যা

হিমায়ন(Freezing)
হিমায়ন বর্তমান সময় পর্যন্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রক্রিয়া। অর্থনৈতিক এবং ঘরোয়া উভয়দিক থেকেই এই পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয়। নানা ধরণের রান্না করা কিংবা না করা খাবার এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। হিমায়নের জন্য বাণিজ্যিকভাবে হিমাগার ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে এক সময়ের খাদবার অন্য সময়ে ব্যবহার করা সম্ভব
হয়

কিউরিং(Curing)
কিউরিং খাদ্য সংরক্ষনের একটি বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়া।একে সল্টিংও বলা হয়। ফ্রিজ আবিষ্কারের পূর্বে এই পদ্ধতি অধিক জনপ্রিয় ছিল। এর মাধ্যমে লবণের দ্রবণ ব্যবহার করে মাছ-মাংস প্রভৃতিকে দীর্ঘদিন অবিকৃতভাবে সংরক্ষণ করা যায়। দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করার জন্য এই দ্রবণের সাথে সামান্য পরিমাণে ল্যাকটিক এসিড যোগ করা হয়। ল্যাকটিক এসিড অণুজীবগুলোকে বংশবিস্তার করতে বাধা সৃষ্টি করে

সুগারিং
সুগার বা চিনি দিয়ে উৎকৃষ্টভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত ফলআচারজেলীএপ্রিকট মারমালেট প্রভৃতি সংরক্ষণের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। চিনির গাঢ় দ্রবণ দ্বারা এই পদ্ধতিতে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। চিনির গাঢ় দ্রবণে অণুজীব ভালোভাবে বৃদ্ধিলাভ করতে পারেনা। ফলে খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন ভালো থাকে

ধূমায়নঃ
খাদ্যের তাক জীবন বৃদ্ধি করার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ধুমায়ন অন্যতম। এই পদ্ধতিতে উদ্ভিজ্জ উপাদান, যেমনঃ কাঠ পুড়িয়ে সৃষ্ট ধোঁয়া খাদ্যে প্রয়োগ করা হয়। এই উত্তপ্ত ধোঁয়া খাদ্যের অণুজীব ধ্বংস করে দেয়। মাছ-মাংস প্রভৃতি সংরক্ষণ করার জন্য ধুমায়ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় মাছ-মাংসের কিউরিং করার পরে ধুমায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে এদের তাক জীবন আরো বৃদ্ধি করা হয়।

কৌটাজাতকরণঃ
কৌটাজাতকরণ খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের একটি আধুনিক ও উন্নত ধরণের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্যকে বায়ুরোধী অবস্থায় বা আগুনে শোধিত করে সাধারণত প্রিজারভেটিভ যোগ করে কৌটার মধ্যে রেখে সংরক্ষণ করা হয়, যেন এর খাদ্যমান ও স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে। এই খাদ্যদ্রব্যকে বহুদিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন দূর করে খাদ্যকে জারণের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও এনজাইম বিনষ্ট এবং অনাকাঙ্খিত ব্যকটেরিয়া ধ্বংসের জন্যেও এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতিতে মাছ, মাংস, ফল, সবজি এমনকি দুধও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতি ব্লাঞ্চিং, একজস্টিং, সিলিং, স্টেরিলাইজিং সহ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Xaviarnau থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.